মুখের চামড়া খসখসে হওয়ার কারণ
বন্ধুরা,আজ আমি যেসব বিষয় তোমাদের সাথে আলোচনা করব,তা হচ্ছে;
মুখের
চামড়া খসখসে হওয়ার কারণ,কোন ভিটামিনের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়,কোন ভিটামিনের অভাবে মুখের চামড়া উঠে,শুষ্ক ত্বকের জন্য কোন ক্রিম ভালো,গরমে ত্বকের শুষ্কতা দূর করার উপায়,হাতের তালু খসখসে হওয়ার কারণ,শুষ্ক ত্বকের ফেসপ্যাক,মুখের মরা চামড়া দূর করার উপায়,ত্বক ফেটে যাওয়ার কারণ
মুখের চামড়া খসখসে হওয়ার কারণ
মুখের চামড়া নানা কারণে খসখসে হতে পারে। এগুলো সাধারণত ত্বকের আর্দ্রতার অভাব, বা কিছু স্বাস্থ্য
সমস্যার কারণে হতে পারে। নিচে কারণগুলো বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো:
ত্বকের শুষ্কতা /Dry Skin
- শীতকালে বা শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়।
- অতিরিক্ত গরম পানিতে মুখ পরিস্কার করলে।
- ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলে।
- পর্যাপ্ত পানি পান না করা
- শরীরে পর্যাপ্ত পানি র অভাবে ত্বক খসখসে হয়ে যেতে পারে।
- এই সমস্যাটি ত্বকের ডিহাইড্রেশনের কারণে ও হতে পারে।
সাবান বা কেমিক্যালের প্রতিক্রিয়া
- অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়।
- কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করলে ও ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে পারে।
পরিবেশগত প্রভাব
- ধুলা, ময়লা, দূষণের কারণে ত্বক রুক্ষ হয়ে হতে পারে।
- সূর্যের অতিরিক্ত তাপ বা UV রশ্মি ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে দিতে পারে।
পুষ্টির অভাব
- ভিটামিন এ, সি, এবং ই এর অভাবে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে পারে।
- শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি।
ত্বকের রোগ/ব্যাধি
- একজিমা (Eczema) বা সোরিয়াসিস (Psoriasis) এর মতো ত্বকের রোগ হলে ত্বক খসখসে হয়ে যেতে পারে।
- অ্যালার্জি বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলেও ত্বক খসখসে হয়ে যায়।
বয়সের চাপ
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার ক্ষমতা হারিয়ে যায়।
সমাধান ও প্রতিকার
- নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
- শীতে মুখ ধোয়ার পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
- পরিমাণমত পানি পান করতে হবে।
- প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
- ত্বকে ক্যামিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন।
- নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করবেন।
- ভাল মানের ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
- মাইল্ড, অ্যালকোহল-মুক্ত, এবং পিএইচ ব্যালেন্সড ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
পরামর্শ
আপনার সমস্যাটি
যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়,
তবে
একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।
কোন ভিটামিনের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়
ত্বক শুষ্ক হওয়ার অন্যতম কারণ হলো কয়েক
প্রকার ভিটামিনের অভাব।
নিচে তা ব্যাখা করা হলো-
ভিটামিন এ:
ভিটামিন এ-এর অভাবে
ত্বক বা চামড়া রুক্ষ
ও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এই ভিটামিন ত্বকের কোষ পুনর্জন্ম এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি:
এটি কোলাজেন উৎপাদনে
সাহায্য
করে
থাকে। এই ভিটামিন-এর অভাবে
ত্বক শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে
উঠতে পারে।
ভিটামিন ডি:
ভিটামিন ডি-এর অভাবেও ত্বক শুষ্ক এবং ফেটে যায়। তাই ত্বক ভাল রাখতে ভিটামিন
এর প্রয়োজন রয়েছে।
ভিটামিন ই:
এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই ভিটামিন এর অভাবে
ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে
যায়।
সমাধান
- ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার (যেমন গাজর, কমলা, পালংশাক, বাদাম) নিয়মিত পরিমাণমত খেতে হবে।
- ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোন ভিটামিনের অভাবে মুখের চামড়া উঠে
যেসকল ভিটামিন এর অভাবে
মুখের চামড়া ওঠে যায়,তা নিচে আলোচনা করা হলো-
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন)
ভিটামিন বি২-এর অভাবে ত্বক
শুষ্ক ও ফেটে যায়। এছাড়া
ঠোঁটের চারপাশ ফেটে চামড়া ওঠার সম্ভাবনা ও থাকে।
ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন)
নায়াসিনের অভাবে পেলাগ্রা নামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ফলে ত্বক রুক্ষ, ফাটা ও চামড়া ওঠার
মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন)
বায়োটিন ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এর অভাবে ত্বকে শুষ্কতা, চুলকানি এবং চামড়া ওঠার পরিস্থিতি হতে পারে।
ভিটামিন এ
ত্বকের কোষ পুনর্গঠন সঠিকভাবে না হলে চামড়া
ওঠার সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন এ-এর ত্বকের
কোষ পুনর্গঠন করা যায়।
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি-এর অভাবে ত্বক দুর্বল হয়ে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ত্বকের চামড়া উঠার ঝুঁকি থাকে।
সমাধান
- নিয়মিত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান (যেমন ডিম, দুধ, গাজর, কমলা, পালং শাক)।
- পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- যদি সমস্যা বেশি হয়, তবে একজন বিশেষজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
শুষ্ক ত্বকের জন্য কোন ক্রিম ভালো
শুষ্ক ত্বকের জন্য এমন ক্রিম বেছে নেওয়া উচিত যা ত্বককে আর্দ্র
রাখে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এ ধরনের ক্রিমে
হিউমেকট্যান্ট, ইমোলিয়েন্ট, এবং ওক্লুসিভ উপাদান রয়েছে। নিচে কিছু কার্যকর ক্রিমের তালিকা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো:
শুষ্ক ত্বকের জন্য ভালো ক্রিমের উদাহরণ
সেরাভি ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম (CeraVe Moisturizing
Cream)
- উপাদান: সেরামাইড, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড।
- বৈশিষ্ট্য: গভীর আর্দ্রতা প্রদান করে এবং ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
- বিশেষত্ব: অতি শুষ্ক এবং সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এই ক্রিম কার্যকর।
নিভিয়া ক্রিম (Nivea Creme)
- উপাদান: প্যান্থেনল, গ্লিসারিন।
- বৈশিষ্ট্য: দীর্ঘস্থায়ী আর্দ্রতা প্রদান করে এবং শুষ্ক ত্বক নরম করে তোলে।
ভ্যাসলিন ইনটেনসিভ কেয়ার অ্যাডভান্সড রিপেয়ার ক্রিম (Vaseline Intensive
Care Advanced Repair)
- উপাদান: গ্লিসারিন, মাইক্রোড্রপলেটস অব ভ্যাসলিন জেলি।
- বৈশিষ্ট্য: ত্বকের গভীরে আর্দ্রতা পৌঁছে দিতে সহায়তা করে।
এভিনো ডেইলি ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম (Aveeno Daily
Moisturizing Cream)
- উপাদান: ওটমিল এবং হিউমেকট্যান্ট।
- বৈশিষ্ট্য: প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
ল্যাক্টোক্যালামাইন ময়েশ্চারাইজার
- উপাদান: জিঙ্ক অক্সাইড, গ্লিসারিন।
- বৈশিষ্ট্য: ত্বক মসৃণ এবং কোমল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
বায়োডার্মা আটোডার্ম ক্রিম (Bioderma Atoderm Cream)
- উপাদান: হাইড্রেটিং এবং লিপিড পুনর্গঠনকারী উপাদান।
- বৈশিষ্ট্য: ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ক্রিম বাছাইয়ের টিপস
- হাইপোঅ্যালার্জেনিক দেখে কিনুন: সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এই ধরনের ক্রিম নিরাপদ।
- নন-কোমেডোজেনিক: ত্বকের ছিদ্র বন্ধ না করে।
- অ্যালকোহল-মুক্ত এবং সুগন্ধি-মুক্ত: শুষ্ক ত্বকে জ্বালাপোড়া কমিয়ে দেয়।
প্রাকৃতিক উপাদানের বিকল্প:
- নারকেল তেল।
- অ্যালোভেরা জেল।
- শিয়া বাটার।
ব্যবহারের টিপসগুলো জেনে নিন
- গোসলের পরে, যখন ত্বক সামান্য ভেজা থাকে, তখন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
- দিনে কমপক্ষে ২-৩ বার ব্যবহার করবেন।
শুষ্ক ত্বকের জন্য আপনার জীবনযাত্রা এবং জলবায়ুর সাথে মানানসই ক্রিম বেছে নিবেন।মনে রাখবেন,কোনভাবেই ক্যামিক্যালযুক্ত
ক্রিম ব্যবহার করবেন না।এটি ত্বকের মারাত্বক ক্ষতি সাধন করে।