খোস পাঁচড়া হলে করনীয়
বন্ধুরা আজ আমি তোমাদের সাথে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব; তা হচ্ছে,খোস পাঁচড়া হলে করনীয়,খোস পাঁচড়া এন্টিবায়োটিক,খোস পাঁচড়া লক্ষণ,খোস পাঁচড়া ঔষধ,খোস পাঁচড়া ছবি,খোস পাঁচড়া ক্রিম,খোস পাঁচড়া হোমিও চিকিৎসা,খোস পাঁচড়া মলম,খোস পাঁচড়া প্রাকৃতিক চিকিৎসা
![]() |
খোস পাঁচড়া হলে করনীয় |
খোসপাঁচড়া: করণীয় ও সচেতনতা
খোসপাঁচড়া,
বা স্ক্যাবিস, একটি বিরক্তিকর ছোঁয়াছোঁয়ি রোগ যা সাধারণত সারকপটিস
স্ক্যাবি নামের এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীর কারণে
হয়ে থাকে। এই রোগ যেকোনো
ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে, তবে বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত
ব্যক্তির ত্বকে প্রথমে সেঁকা ও পরে পুঁজপূর্ণ
বড় বড় ফুসকুড়ি দেখা
দেয়। শুরুতে আক্রান্ত স্থানে তীব্র চুলকানি হয়, যা রাতে আরও
বৃদ্ধি পায়।
খোসপাঁচড়া
অন্য ত্বক সমস্যা যেমন অ্যালার্জি, ভাইরাস বা ছত্রাক সংক্রমণ
থেকে আলাদা। স্ক্যাবিস জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ২৪ থেকে ৩৬
ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে এবং ত্বকের উপরের স্তরে বাস করে, দিনে দুই-তিনটি ডিম পাড়ে।
রোগের লক্ষণ:
· খোসপাঁচড়ার
প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র চুলকানি এবং ত্বকে ফুসকুড়ি বা লাল হয়ে
ফুলে ওঠা। এটি সাধারণত আঙুলের ফাঁকে ও ত্বকের ভাঁজের
মধ্যে দেখা যায়, এবং চুলকানি সাধারণত রাতে বাড়ে।
·
নবজাতক
ও শিশুদের ক্ষেত্রে ঘাড়, মাথার তালু, মুখ, হাতের তালু ও পায়ের তলায়
এই রোগ হয়ে থাকে।
· যাদের
আগে কখনো খোসপাঁচড়া হয়নি, তাদের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে। তবে যাদের আগে হয়েছে, তাদের লক্ষণ দ্রুত প্রকাশ পায়।
·
এটি
একটি মারাত্মক ও ছোঁয়াছোঁয়ি রোগ,
তাই আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সকল সদস্যের চিকিৎসা প্রয়োজন।
রোগ সংক্রমণ:
- একই বিছানায় শোয়া, ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগ, বা অভিন্ন কাপড়চোপড় ও তোয়ালে ব্যবহারের মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাত মেলালেও এটি সংক্রমিত হতে পারে, তাই এক পরিবারে, স্কুলে বা হোস্টেলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব একসাথে দেখা দিতে পারে।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা:
· চিকিৎসকরা
রোগীটির শারীরিক লক্ষণ পরীক্ষা করে এবং ত্বকের নমুনা মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে পরীক্ষা করে স্ক্যাবিস মাইট ও এর ডিম
শনাক্ত করে রোগ নির্ণয় করেন।
·
খোসপাঁচড়ার
চিকিৎসা সহজ; সাধারণত পারমেথ্রিন ক্রিম ব্যবহৃত হয়। এই ক্রিমটি রোগীর
চোখ-মুখ ছাড়া সমস্ত স্থানে প্রয়োগ করতে হয়। বিকল্প ঔষধ হিসেবে ইভারমেকটিনও ব্যবহার করা যেতে পারে।
·
কিছু
ক্ষেত্রে চিকিৎসক পারমেথ্রিনের পরিবর্তে ক্রোটামিটন বা লিন্ডেন লোশন
ব্যবহারের পরামর্শ দেন। চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধও দেওয়া হয়।
·
সফল
চিকিৎসার পরও এক থেকে দুই
সপ্তাহ পর্যন্ত চুলকানি স্থায়ী থাকতে পারে।
খোশ-পাঁচড়ায় পারমিথ্রিন ক্রিম/লোশনের ব্যবহারের নিয়ম
- গোসল করার পর আপনার সমস্ত শরীর শুকিয়ে নিবেন।
- যে সকল শিশুদের বয়স দুই বছরের কম, তাদের ক্ষেত্রে পারমিথ্রিন ক্রিম ঘাড়ে, কানে, মাথায় এবং মুখ মন্ডলে(চোখ,মুখ ব্যতিত) ভালো করে লাগাবেন।
- আপনার পরিবারের সদস্যদের সকলের কাপড় ও বিছানার কাপড় সাবান ও গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন।
- যাদের বয়স দুই বছরের ঊর্ধ্বে এবং প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, তাদের ক্ষেত্রে হাত ও আঙ্গুলের ফাঁকে, শরীরের বিভিন্ন ভাজে, যৌনাঙ্গের বাহিরে পারমিথ্রিন ক্রিম ত্বকে মিশে যাওয়া না পর্যন্ত লাগাতে হবে।
- আর লোশন লাগানোর ক্ষেত্রে গলার নিচে, গলার নিচ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পুরো শরীরে ভালোভাবে লাগাবেন।
- ব্যবহার করার পর ৮ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাবান ও গরম পানিতে ভালো করে গোসল করে ফেলতে হবে।
- আবার পানিতে ঔষধ মুছে যাওয়ার গেলে তা পুনরায় লাগাতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভাল না হওয়া পর্যন্ত ঔষধটি ব্যবহার করতে হবে।
বয়স ভেদে ঔষধ প্রয়োগের মাত্রা
- প্রাপ্ত বয়স্ক ও ১২ বছরের অধিক বয়সী শিশুদের জন্য: ১টি টিউব
- ৬-১২ বছর বয়সীদের জন্য: ১টি টিউবের অর্ধেক
- ১-৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য: ১টি টিউবের চার ভাগের ১ অংশ।
- ২ মাস-১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য: ১টি টিউবের ৮ ভাগের ১ অংশ।
- সতর্কতাঃ ২ মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে উক্ত ঔষধটি ব্যবহার করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধটি ব্যবহার করতে হবে।আর দুগ্ধদানকালে ঔষধটি ব্যবহার করা যাবে না।