হাঁটুর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
বন্ধুরা আজ আমি তোমাদের সাথে হাঁটুর সমস্যা নিয়ে যেসব বিষয়গুলো আলোচনা করব; হাঁটুর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা,হাঁটু ব্যথার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা,হাটুর ব্যাথা সারানোর খাবার,হাটুর ব্যাথা সারানোর ব্যায়াম,হাটুর ব্যাথা সারানোর ঔষধ,হাটু ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার,হাটুর ব্যাথা কেন হয়,হাটুর জয়েন্টে ব্যথা ঔষধের নাম,হাটুর ব্যাথা সারানোর হোমিও ঔষধ
হাঁটুর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
আপনি কি হাঁটুর ব্যথায় কাতরাচ্ছেন? অসহ্য হয়ে গেছেন হাঁটুর ব্যথায়? হাঁটুর ব্যথায় কম বয়সী বা বেশি বয়সী সকলেই আক্রান্ত হতে পারে। তো এই ব্যথাটা সকলের মধ্যেই হানা দিতে পারে। এটি ব্যায়াম না করা এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে।
আদা ও হলুদের ব্যবহারঃ
একটি পাত্রে পরিষ্কার পানি নিন। তাতে আদা ও হলুদ পরিমান মত দিয়ে দিন। তারপর মিশ্রণটির সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে দিন। এভাবে মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে এটি কমপক্ষে দৈনিক দুইবার পান করে নিন। এতে আদা ও হলুদে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকা উপাদানটি কারকিউমিন হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে ব্যথাকে উপশম করে।
পানি ও লবনের সেঁক
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সমৃদ্ধ সৈন্ধব লবণ দিয়ে পানিসহ মিশ্রণটি ফুটিয়ে নিন। তারপর ব্যথার জায়গায় উক্ত মিশ্রণটি দিয়ে ব্যথার স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হবে।
বরফ ও জেলের সেঁক
বাজারে থেরাপিকেল জেল পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাজার থেকে জেল কিনুন। থেরাপেটিক জেলিটি পানিতে গরম করে নিন এবং গরম করা শেষে ব্যথার জাগায় লাগিয়ে দিন। ব্যথার জায়গাটি গরম হয়ে উঠলে সেখানে বরফ চেপে ধরুন। এভাবে কয়েকবার করলে আপনার ব্যথা অনেকটাই ভাল হবে এবং আপনি আরামবোধ করবেন।
মেথির ব্যবহার
এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মেথি ব্যথা উপশমে খুবই কার্যকর। বাজারে স্বল্প দামে মেথি পাওয়া যায়। মেথি এনে কুসুম গরম পানিতে গরম করে ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে দিলে ব্যথা উপশম হবে। অথবা রাত্রে মেথি বীজ ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই ভিজিয়ে রাখা পানিটা পান করলে ব্যথা কমে যাবে
গাজরের রস ও লেবুর রসের মিশ্রণ
গাজর পিষে রস বের করে নিন এবং তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে শরবত বানিয়ে নিন। এটি কমপক্ষে দৈনিক ২ বার পান করুন। এতে আপনার ব্যথা অনেকটাই উপশম হবে।
নারিকেল তেল ও ঝালের গুড়া মিশ্রণ
লাল মরিচে রয়েছে ক্যাপসাইসিন যা ব্যথা উপশমে খুবই কার্যকর। হাফ কাপ নারকেল তেলের সাথে দুই টেবিল চামচ ক্যাপচাসিনের গুড়া মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে ব্যথায় লাগিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ পর কুসুম গরম পানি দিয়ে উক্ত জায়গাটি পরিষ্কার করে নিন। এভাবে কয়েকদিন করতে থাকলে আপনার ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
ব্যায়াম
চিকিৎসকদের মতে প্রতিদিন ভালোভাবে ব্যায়াম করলে অর্থাৎ ৩০ মিনিট কমপক্ষে ব্যায়াম করলে হাঁটুর ব্যথা কমে যায় বা অস্টিওআথ্রাইটিস এর ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। তাই এক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন সাইকেল চালাতে পারেন, হাঁটতে পারেন, তাই চি করতে পারেন এবং যোগা ব্যায়াম ও করতে পারেন।
শরীরের ওজন কমানো
শরীরের ওজন বেশি হলে তা হাটুর উপরে চাপ প্রয়োগ করে এবং হাঁটুর উপর এভাবে চাপ পড়তে থাকলে ব্যথা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার শরীরের ওজন কমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলেই আর্থ্রাইটিস বা দুরারোগ্য ব্যথা থেকে বাঁচতে পারবেন।
সঠিক ডায়েট গ্রহণ
বাইরের কোন খাবার গ্রহণ করা অস্টিওআথ্রাইটিস রোগীর জন্য মোটেই ভালো নয়। তাই বাহিরের খাবার না খেয়ে এবং চর্বি জাতীয় কোন খাবার গ্রহণ না করে, বেশি বেশি করে ফল ও শাকসবজি খেয়ে নিন। এতে করে আপনার ব্যথা অনেকটাই উপশম হবে।
আরামদায়ক পাদুকর ব্যবহার
হাঁটুর ব্যথা কমাতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন আরামদায়ক জুতা যা আপনার হাঁটুর ব্যথাকে অনেকটাই কমিয়ে রাখবে।
ওমেগা থ্রি প্যাটি এসিডের ব্যবহার
আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। এটি পাওয়া যাবে সামুদ্রিক মাছে। যেমন টোনা মাছ,স্যামন মাছ ইত্যাদি। তাছাড়া বাদাম ফ্লেক্সিসিড ইত্যাদিও খেতে পারেন ব্যথা কমানোর জন্য।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের ব্যবহার
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার আপনার হাঁটুর ব্যথার জোড়া পিচ্ছিল করে এবং আপনাকে পথ চলাচলে সহায়তা করে। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানির সাথে আধা কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন। এতে আপনি অনেকটাই আরামবোধ করবেন।
গরম ভাপ দেওয়া
ব্যথা কমানোর জন্য অর্থাৎ হাটুর ব্যথা কমানোর জন্য আপনি ইচ্ছা করলে ব্যথার উপর গরম ভাপ দিতে পারেন অর্থাৎ কাপড় গরম করে ব্যথার স্থানে লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে আপনি হাঁটুর ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
হাঁটুর ব্যথার ব্যায়াম
স্ট্রেসিং এক্সারসাইজ
জয়েন ও হাঁটুতে ব্যথা থাকলে এই ব্যায়ামটি অত্যন্ত কার্যকর হবে। হাঁটুর জয়েন্ট ও মাংসপেশিতে নমনীয়তা বৃদ্ধিতে এটি খুবই কার্যকর। তাই ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে স্ট্রেসিং করুনে।এতে আপনার হাঁটুর ব্যথা কমে যাবে এবং আপনি সুস্থতা বোধ করবেন।
স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ
আরো বেশি করে পেশির জোর বাড়াতে স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ করুন। এটি প্রতিদিন ১৫ মিনিট লাগিয়ে এই ব্যায়ামটি করুন। তাহলে আপনার ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে এবং আপনি আরাম পাবেন।
সাঁতার কাটার ব্যায়াম করুন
এই ব্যায়াম করলে শরীরের সমস্ত পেশি ও জয়েন্টগুলো ভালোভাবে নড়াচাড়া হয়। এক্ষেত্রে হাঁটুর উপরে চাপ কম পড়ে। তাই এই ব্যায়ামটি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট করলে আপনার ব্যথা অনেকটা নিরাময় হবে এবং ক্ষতিকারক ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
হাটার ব্যায়াম
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন। এই ব্যায়ামটি আপনার শরীরের ব্যথাকে উপশম করতে সাহায্য করবে। আর এটি ব্যায়াম করার একটি সহজ এবং ভালো পদ্ধতি। তাই আমরা ছোট বড় সবাই হাঁটতে পারি। নিয়মিত হাঁটুন এবং সুস্থ থাকুন।
লেক রেজ ব্যায়াম
সোজা হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন এবং আপনার দুই হাতের তালু মেঝের উপর রাখুন। তারপর বাম পা ধীরে ধীরে ওপরের দিকে তুলুন। মনে রাখবেন কমপক্ষে ৪৫ ডিগ্রী পর্যন্ত পা রাখতে হবে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে পা নামিয়ে নিন। এভাবে ডান পা টির ব্যায়াম করুন আর এভাবে করলে আপনার হাঁটুর ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
হাফ স্কোয়াট ব্যায়াম
প্রথমে আপনাকে মেজর উপর দাঁড়িয়ে যেতে হবে এবং সামনের দিকে দুটি হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ধীরে ধীরে বসার চেষ্টা করুন। তবে ৫০% বসুন অর্থাৎ অর্ধেক বসুন। আবার অর্ধেক বসা অবস্থায় ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে জান। এভাবে কয়েকবার করুন। তাহলে আপনার হাঁটুর ব্যথাটা কমে যাবে।
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা ঔষুধের নাম
Diclomol Tablet এই ঔষুধের বিকল্প হিসেবে:
Fenak Plus 50mg/325mg Tablet/
Diclowin Plus Tablet
/Intagesic 50 mg/325 mg Tablet
Cadinxt Plus 50Mg/325Mg Tablet/
Rhumacort 50 Mg/325 Mg Tablet.
তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধগুলো খাওয়াই উত্তম।
ব্রায়োনিয়া অ্যালবা
অস্টিওথেরাইটিস বা হাটুর ব্যথায় ব্রায়োনিয়া অ্যালবা এই হোমিও ওষুধটি খুবই কার্যকর। তাই আপনার ব্যথা কমাতে খেতে পারেন এই ব্রাউনিয়া অ্যালবা ওষুধটি।তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধটি ব্যবহার করবেন।
বয়সের সমস্যায় করণীয়
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের সংখ্যা কমে যায়। ফলে শরীরে বা হাঁটুতে ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন মহিলাদের হাঁটুতে ব্যথা হয়:
বাদাম ও বাদাম বীজ
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের উৎস। তাছাড়া এটি প্রদাহ বিরোধী ঔষধ হিসেবে কাজ করে যেমন বাদাম আখরোট শণির বীজ ইত্যাদি। এ খাবারগুলো আপনার দেহের ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকর।তাই নিয়মিত এ খাবারগুলো খেতে পারেন।