ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা


বন্ধুরা আজ আমি তোমাদের সাথে ডেঙ্গু নিয়ে যেসব বিষয় আলোচনা করব তা হচ্ছে,ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা,শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা,ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে,ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে,ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে?

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা,শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা,ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে,ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে,ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে?

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা, ডেঙ্গু রোগ একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ যা প্রধানত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।বিশেষ করে গ্রীষ্ম এবং বর্ষা মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডেঙ্গু রোগের সঠিক সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই রোগ থেকে নিজেকে এবং আমাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা

   ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা, ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হওয়ার পর তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে যে কারোরই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো সম্পর্কে সবারই ভালোভাবে জানা উচিত। এই উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে:


  • জ্বর ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে।
  • তীব্র মাথাব্যথা।
  •  বমি বমি ভাব বা বমি।
  •  চোখের পেছনে ব্যথা।
  • চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ)।
  •  শরীরে শীতলতা অনুভব।
  •  ক্ষুধামন্দা।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য।
  • স্বাদ পরিবর্তন।
  • হৃদস্পন্দনের হার ও রক্তচাপ কমে যাওয়া।
  • পেশি ও গাঁটে ব্যথা।


ডেঙ্গু রোগের লক্ষণসমূহ

 ডেঙ্গু রোগের লক্ষণসমূহ, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের ৪-১০ দিন পর প্রকাশ পেতে শুরু করে। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:


উচ্চ জ্বর: হঠাৎ করে তীব্র জ্বর আসে যা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

মাথাব্যথা: চোখের পেছনে তীব্র মাথাব্যথা অনুভূত হয়।

গাঁটে এবং মাংসপেশিতে ব্যথা: শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে পিঠ এবং হাঁটুতে ব্যথা হয়।

চামড়ায় র‌্যাশ: শরীরে র‌্যাশ  বা লালচে দাগ দেখা যায়।

বমি বমি ভাব বা বমি করা: ডেঙ্গু রোগীরা প্রায়ই বমি বমি ভাব অনুভব করে এবং কখনও কখনও বমি করে।

চোখের পেছনে ব্যথা: অনেক সময় চোখের পেছনেও ব্যথা হতে পারে।

রক্তপাত: গুরুতর ক্ষেত্রে নাক, মুখ বা দাঁত থেকে রক্তপাত হতে পারে।

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা

 ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা, ডেঙ্গু রোগের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তবে লক্ষণগুলোর উপশমের জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা উন্নত করা সম্ভব।


প্রচুর পরিমাণে পানি পান: ডেঙ্গু রোগীর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, তাই প্রচুর পানি পান করতে হবে।

বিশ্রাম নেওয়া: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

প্যারাসিটামল ব্যবহার: জ্বর এবং ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শে এটি ব্যবহার করতে হবে।

পুষ্টিকর খাবার: পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।যেমন- ছোলা,ডাল,শাক-সব্জি,ডিম ইত্যাদি।এগুলো অ্যামাইনো এসিডের যোগান দেয়,পাশাপাশি প্রচুর প্রোটিনের ও উৎস।তাছাড়া ভাতের সাথে ডাল মিশিয়ে খেলেও পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা যায়।

হাসপাতালে ভর্তি: রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের উপায়

  ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের উপায়, ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। নিম্নলিখিত কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যেতে পারে:

ডেঙ্গু রোগের বংশ বিস্তার ঠেকানো:

    ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের উপায়, ডেঙ্গু জীবাণুবাহী মশা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বংশবিস্তার করে, যেমন ফুলের টব, অব্যবহৃত প্লাস্টিকের ঢাকনা, ডাবের খোসা, জমে থাকা পানির পাত্র এবং পোষা প্রাণীর খাবারের পাত্র। এসব স্থানে মশার বৃদ্ধি রোধ করতে হলে এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি।

দরজা-জানালা বন্ধ করা:

     ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের উপায়, বাড়িতে মশার প্রবেশ রোধ করতে দরজা-জানলা ভালোভাবে বন্ধ রাখতে হবে। এডিস মশা সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যাবেলায় কামড়ায়, তাই এই সময়গুলোতে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।


মশা নিধন পদ্ধতি:    

   ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের উপায়, মশা নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল, ব্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত। শিশুদের সুরক্ষার জন্য মশার প্যাচ, মশার ব্যান্ড, বা মশা প্রতিরোধী স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।মশারোধক ক্রিম বা স্প্রে: মশারোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন, বিশেষ করে সকালে এবং সন্ধ্যায়।

পোশাক-পরিচ্ছদ:

    ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের উপায়, মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে লম্বা হাতাওয়ালা পোশাক, ফুল প্যান্ট, মোজা, এবং জুতা পরিধান করুন। মশার প্রচুর উপস্থিতি যেখানে থাকে, সেখানে এই পোশাকগুলো আপনার জন্য প্রতিরক্ষামূলক হিসেবে কাজ করবে।

আলো-বাতাসপূর্ণ ঘর:

 ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের উপায়, মশা সাধারণত অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে স্থানে থাকে। ঘরে মশার প্রবেশ রোধ করতে সব সময় ঘরকে আলো-বাতাসপূর্ণ রাখা জরুরি। এতে মশার উপদ্রব থেকে সহজেই বাঁচা যাবে।

পানি জমতে না দেওয়া: বাড়ির আশেপাশে কোনো স্থানে পানি জমতে দেবেন না, কারণ এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে।

 সচেতনতা : ডেঙ্গুর বিষয়ে সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং সকলে মিলে পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হবে।

বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: বাড়ির আশেপাশে জমা আবর্জনা এবং পানির উৎসগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।


ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

  • ডাবের পানি
  • আদা পানি
  • ওআরএস
  • লেবু পানি
  • ব্রুকলি
  • পালং শাক
  • কালা আঙ্গুর
  • হলুদ
  • মেথি
  • ছাগলের দুধ
  • স্যুপ

ডাবের পানিঃ

  ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, ডেঙ্গু হলে প্রচুর শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানির ঘাটতি দেখা যায়।এ ঘাটতি পূরণ করা অতি দরকার।তাই ডাবের পানি দিয়ে এ ঘাটতি পূরণ করতে হবে।কেননা ডাবে রয়েছে প্রচুর ইলোক্ট্রলাইট ও পুষ্টি।যা শরীরে পানি শূন্যতা পূরণে অসামান্য অবদান রাখে।

আদা পানিঃ

    ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, ডেঙ্গু হলে রোগীর বমি বমি ভাব তৈরি হয়।আর এ সমস্যা দূর করতে আদা পানি যথেষ্ট সহায়তা করে।

ওআরএসঃ

    ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন।এতে রয়েছে প্রচুর পটাসিয়াম,যা ডেঙ্গু রোগীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

লেবু পানিঃ

     ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, লেবু হলো ভিটামিন ‘সি’ এর গুরুত্বপুর্ণ উৎস।এটি ডেঙ্গু রোগীর দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়।

ব্রুকলিঃ

   ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, ব্রুকলি তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,খনিজ ও ভিটামিন ‘কে’।যা রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে গেলে তা ডেঙ্গু রোগীর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।তাই প্রয়োজনে ব্রুকলি ব্যবহার করুন।

পালং শাকঃ

     ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে এটি একটি গুরুত্বপুর্ণ সব্জি।কারণ এ সব্জিতে রয়েছে,ভিটামিন ‘কে’,আয়রণ,পটাসিয়াম ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট,যা  ডেঙ্গু নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

কালা আঙ্গুরঃ

     ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, কালা আঙ্গুরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।এটি দেহে রক্ত গঠনে সাহায্য করে।এটি ডেঙ্গু সারাতে সাহায্য করে।তাছাড়া পেয়ারা ও হতে ভাল উৎস।

হলুদঃ

      ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, হলুদে রয়েছে এন্টিসেপটিক উপাদান,যা দেহের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।দুধের সাথে হলুদ দিয়ে খেলে দ্রুত ডেঙ্গু রোগ নিরাময় হয়।

মেথির ব্যবহারঃ

     ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, রোগীর ভাল ঘুম আনয়নে এবং দেহের যন্ত্রণা কমাতে অনেক কার্যকরী।তাছাড়া জ্বরের মাত্রা কমাতে ও অসমান্য অবদান রাখে।

ছাগলের দুধঃ

 ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, ডেঙ্গু রোগীর জন্য ছাগলের দুধ অনেক উপকারী।তাই ডেঙ্গু নিয়মিত ছাগলের দুধ গ্রহণ করুন।

স্যুপঃ

    ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, ডেঙ্গু হলে রোগীকে বিটরুটের স্যুপ খাওয়ান।কারণ,এটি ডেঙ্গু রোগ সারাতে অনেক অবদান রাখে।স্যুপ এ রয়েছে প্রচুর পানি, ভিটামিন (বি৯, ভিটামিন সি), খনিজ পদার্থ (ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, আয়রন)। যা ডেঙ্গু রোগ দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।এমনকি এ উপাদানগুলো রক্তের লোহিত কণিকা বাড়াতে সহায়ক।আপনি পাশাপাশি রোগীকে টমাটো স্যুপ ও খাওয়াতে পারেন।কেননা,টমাটোতে রয়েছৈ ভিটামিন সি এবং পটাসিয়াম,যা ডেঙ্গু নিরাময়ে ভাল কাজ করে।

ডালিমঃ

 ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, পুষ্টি ও খনিজ উপাদানে ভরপুর এই ডালিম ফল।যা দেহে শক্তি যোগায় এবংক্লান্তি দূর করে।তাছাড়া এ ফলে রয়েছে প্রচুর আয়রণ,যা শরীরে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।


ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে

   ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, ডেঙ্গু রোগ হলে উপরোক্ত পরামর্শগুলো মেনে চলুন।ঔষধ হিসেব নরমাল প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন।

ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা:

•রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।

•প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।

•কুসুম গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর বারবার মুছে দিন। 

•প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে, 

•তবে রোগীকে অ্যাসপিরিন বা এই ধরনের ওষুধ দেবেন না।

•ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই; 

•ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে। তবে কারো যদি কোন জ্বর কিংবা ঠান্ডা লেগে থাকে, সেক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি দিয়ে সে গোসল করতে পারে। তাছাড়া অনেক সময়  জ্বর  বেশি হলে গা মুছে দেওয়া যেতে পারে। সুতরাং ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই গোসল করা যাবে।

 উপসংহার

  ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা, ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগ হলেও সঠিক সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url