জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

 

 বন্ধুরা আজ আমি যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হচ্ছে,জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়,বাচ্চাদের জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়,জ্বর বমি পাতলা পায়খানা কিসের লক্ষণ,জ্বর পাতলা পায়খানা বমি হলে করণীয়,কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়,বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি,ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ,পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানার ঔষধ

পাতলা পায়খানা, যা ডায়রিয়া নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি শরীরে জলশূন্যতার (ডিহাইড্রেশন) কারণ হতে পারে এবং শরীরকে দুর্বল করতে পারে। এই অবস্থায় সঠিক যত্ন এবং প্রতিকার জানা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।

জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

 

জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

জ্বর ও পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণসমূহ

পাতলা পায়খানা হতে পারে বিভিন্ন কারণে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইটের আক্রমণে ডায়রিয়া হতে পারে।

ফুড পয়জনিং: দূষিত বা ব্যাকটেরিয়াযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া হতে পারে।

খাদ্য অ্যালার্জি: কিছু খাবারের প্রতি অ্যালার্জি থাকলে তা ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

জলবায়ুর পরিবর্তন: আবহাওয়া পরিবর্তন বা ভ্রমণের সময় খাবার বা পানির পরিবর্তন ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।

অন্ত্রের প্রদাহ: ক্রোনস ডিজিজ বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের মতো অন্ত্রের প্রদাহও পাতলা পায়খানার কারণ হতে পারে।

 

জ্বর ও পাতলা পায়খানার লক্ষণসমূহ

নীচে আপনার অনুরোধ করা লেখাটি পুনরায় লেখা হয়েছে:

 

  • হঠাৎ করে পায়খানার চাপ অনুভব করা।
  • পায়খানা লাগলে দ্রুত টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন বা অপেক্ষা করতে না পারা।
  • পায়খানা নিয়ন্ত্রণ ; হয়তো অনেক সময় পোশাকে পায়খানা লেগে যেতে পারে।
  • তলপেটে তীব্র ব্যথা বা কাঁমড় অনুভব করা।
  • বমি বমি ভাব থাকা; যদিও কিছু ক্ষেত্রে এটি উপস্থিত না- থাকতে পারে।
  • শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।
  •  

যদি সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হয়, তবে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

 

  • পায়খানার সাথে রক্তপাত হওয়া।
  • জ্বর এবং ঠাণ্ডা লাগা।
  • হালকা মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা।
  • বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব অনুভব করা।

শিশু-কিশোরদের মধ্যে ডায়রিয়ার লক্ষণ:

 

  • ঘন ঘন তৃষ্ণা অনুভব করা।
  • স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্রাব হওয়া, এমনকি টানা ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া।
  • শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া।
  • মুখের ত্বক শুষ্ক দেখানো।
  • কান্নার সময় শিশুর চোখে পানি না আসা।
  • ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া বা ত্বক কুচকে যাওয়া।


 

 

পানিশূন্যতা:

 

ডায়রিয়ার ফলে পায়খানা বমির পাশাপাশি মূত্র ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইটস (সোডিয়াম, ক্লোরাইড, পটাশিয়াম এবং বাইকার্বনেট) বেরিয়ে যায়। এই উপাদানগুলো পূরণ না হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো:

 

  • ঘন ঘন তৃষ্ণা লাগা।
  • মুখ, জিহ্বা গলা শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
  • স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্রাব হওয়া বা প্রস্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  • প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া।
  • ক্লান্তি বোধ করা।
  • চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গভীরে ঢুকে যাওয়া।
  • শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যাওয়া, এবং নাড়ি খুব দ্রুত এবং ক্ষীণ হয়ে যাওয়া।
  • রোগী নিস্তেজ অসাড় হয়ে যেতে পারে এবং কখনও কখনও পেট ফেঁপে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত পানিশূন্যতার ফলে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।
  • ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া বা কুচকে যাওয়া; রোগীর শরীরের চামড়া টেনে ছাড়ার পর যদি এটি দুই সেকেন্ডের মধ্যে পূর্বাবস্থায় ফিরে না আসে, তাহলে বুঝতে হবে রোগীর পানিশূন্যতা অত্যন্ত গুরুতর।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।


কিভাবে বুঝবেন কতখানি পানিশূন্যতা রয়েছে

 

রোগীর শরীরে পানিশূন্যতা তিনটি ধাপে ভাগ করা যায়:

মারাত্মক পানিশূন্যতা (Severe Dehydration)

 

  • রোগী প্রায় মৃতের মতো নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকবে।
  • চোখ শুকিয়ে যাবে এবং গভীরভাবে চোখের কোঠরে ঢুকে যাবে।
  • জিহ্বা মুখ শুষ্ক হয়ে থাকবে।
  • কান্না করলে চোখে পানি আসবে না।
  • শরীরের চামড়া টেনে ছাড়ার পর দু-সেকেন্ডের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় না ফিরে কুচকে থাকবে, যা অত্যন্ত গুরুতর পানিশূন্যতার লক্ষণ।
  • রোগী অত্যন্ত পিপাসার্ত থাকবে, তবে পানি খেতে পারবে না অথবা খুব কম খেতে পারবে।
  • নাড়ির স্পন্দন (Pulse) অত্যন্ত দ্রুত দুর্বল হয়ে যাবে, এমনকি নাড়ি অনুভবও করা নাও যেতে পারে।
  • ছোট শিশুদের মাথার তালু অনেক গভীরে বসে যাবে।
  • শরীরের চামড়া টেনে ছাড়লে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে দেরি হবে।

 

মৃদু পানিশূন্যতা (Some Dehydration)

 

  • শিশু পিপাসার্ত থাকবে এবং অশান্ত হয়ে উঠবে; শান্ত থাকলেও ধরলে বা ছোঁয়ার পর চিৎকার করে উঠবে।
  • ছোট শিশুর মাথার তালু বসে যাবে।
  • নাড়ির স্পন্দন (Pulse) দ্রুত হবে।
  • চোখ কোঠরে ঢুকে যাবে।
  • মুখ জিহ্বা শুকিয়ে যাবে।
  • কান্নার সময় চোখে পানি আসবে না।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ অনেক কমে যাবে
  • প্রস্রাবের রঙ গাঢ় (হলুদাভ) হবে বা প্রস্রাব সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হতে পারে।

 

পানি শূন্যতার লক্ষণ না থাকলে (No sign of Dehydration)

 

  • রোগী পিপাসার্ত না থাকলেএবং অন্যান্য সময়ের মতো স্বাভাবিকভাবে পানি পান করে থাকলে।
  • নাড়ির স্পন্দন (Pulse) এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক থাকে।
  • জিহ্বা মুখ শুষ্ক হয় না।
  • চোখ স্বাভাবিক থাকে, এবং কান্নার সময় চোখে পানি আসে।
  • শরীরের চামড়া টেনে ছাড়লে তা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

 

 

 

ডায়রিয়া কেন হয়?

 

ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে:

 

সংক্রামক কারণ:

  • জীবাণু সংক্রমণ: ডায়রিয়া জীবাণু সংক্রমণের ফলে হয়।
  • দূষিত পানি: দূষিত পানি পানের মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়।
  • দূষিত বা পচা খাবার: দূষিত বা পঁচা-বাশি খাবার খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা বা ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • ভ্রমণ: ভ্রমণের সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলেও ডায়রিয়া হতে পারে।

 

সংক্রামক ডায়রিয়া কেন হয়?

  • ভাইরাসজনিত: যেমন রোটা ভাইরাস, অ্যাস্ট্রো ভাইরাস, এডেনোভাইরাস ইত্যাদি।
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত: যেমন সালমোনেলা, শিগেলা, . কলাই, ভিব্রিও কলেরি, ক্যামপাইলোব্যাকটর ইত্যাদি।
  • পরজীবীজনিত: যেমন জিয়ারডিয়া, ক্রিপ্টোসপরিডিয়াম, সাইক্লোসপরা ইত্যাদি।

 
অসংক্রামক ডায়রিয়া কেন হয়?

  • কিছু অসুখের কারণে: যেমন ডাইভার্টিকুলাইটিস, পায়ুপথ বা অন্ত্রের ক্যান্সার, আইবিএস, আলসারেটিভ কোলাইটিস ইত্যাদি।
  • কিছু ওষুধের কারণে: যেমন ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড, বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক, জোলাপ ইত্যাদি।

 

দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার কারণ:

  • জিয়ারডিয়া ইনটেস্টিনালিস
  • স্ট্রংগিলয়ডিয়াসিস
  • এনটারোপ্যাথিক . কলাই
  • খাদ্য হজমে সমস্যা
  • অন্ত্রের কৃমি ইত্যাদি।

 

ডায়রিয়া হলে কী করণীয়?

 

ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা তীব্র হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য।

 

  • লবণ পানি পূরণ করা: শরীর থেকে যে পরিমাণ লবণ পানি বেরিয়ে যাচ্ছে তা পূরণ করতে রোগীকে বারবার খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার খাওয়ান। এছাড়া ডায়রিয়ার কারণ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করা।
  • প্রতিবার পাতলা পায়খানা বা বমির পর: প্রতিবার পাতলা পায়খানা বা বমি হলে সমপরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়ান।
  • পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো: রোগীকে স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন।

 

বাচ্চাদের জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

বুকের দুধ খাবার স্যালাইন: শিশুদের ডায়রিয়া হলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়ান।

ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি নিচের উপসর্গগুলি দেখা দেয়, তবে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিন:

  •    ডায়রিয়া ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলতে থাকলে।
  •   ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি জ্বর থাকলে।
  •   তলপেট বা মলদ্বারে গুরুতর ব্যথা অনুভব করলে।
  •   মলের সাথে রক্তপাত হলে বা মলের রঙ কালো হলে।
  •   পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে।

 

প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়রিয়া হলে করণীয়:

  • খাবার স্যালাইন তরল খাবার: প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়রিয়া হলে বারবার খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি নিচের উপসর্গগুলি দেখা দেয়, তবে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
  •  ডায়রিয়া দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
  •   ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি জ্বর থাকলে।
  •    বারবার বমি হলে।
  •   ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বার বা তার বেশি পায়খানা হলে।
  •    তলপেট বা মলদ্বারে গুরুতর ব্যথা অনুভব করলে।
  •   মলের সাথে রক্তপাত হলে বা মলের রঙ কালো হলে।
  •   পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়

 

ডায়রিয়া প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা উচিত:

 

  • বিশুদ্ধ পানি পান করুন: নিশ্চিত করুন যে পানির উৎস পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত। 
  • পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করুন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং লবণ গ্রহণ করুন, বিশেষত গরমের সময়। রমজান মাসে ইফতারের পর থেকে সাহরীর আগে পর্যন্ত অন্তত দুই লিটার পানি পান করুন। 
  • অত্যধিক গরম পরিবেশে কাজ এড়িয়ে চলুন: যদি কাজ করতেই হয়, তবে সময়ে সময়ে ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম নিন। 
  • বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন: কাজের জায়গায় সঠিকভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। 
  • ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: পায়খানা থেকে বের হওয়ার পর এবং খাবারের আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন, নিয়মিত নখ কাটুন, পরিষ্কার পোশাক পরিধান করুন এবং নিয়মিত গোসল করুন। 
  • পঁচাবাসি এবং তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত গরমে ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে খাবার গ্রহণ করা এড়িয়ে চলুন। 
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: প্রতিদিন সুষম খাবার গ্রহণ করুন। 
  • শিশুদের মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ান: শিশুরা মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ পান করুক। 
  • রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিন: সম্ভাব্য হলে রোটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন। 
  • স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ান: বিশেষত সংক্রামক রোগ সম্পর্কে আরও সচেতন হোন। 
  • ডায়রিয়া বা বমি শুরু হলে স্যালাইন নিন: ডায়রিয়া বা বমি শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে খাবার স্যালাইন খাওয়া শুরু করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

পানিশূন্যতা কিভাবে পূরণ করবেন?

 

ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ পানি বেরিয়ে যায়, ফলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সময় নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:

 

  • খাবার স্যালাইন খাওয়ানো: ডায়রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবার স্যালাইন খাওয়া শুরু করতে হবে।
  • ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন: যদি খাবার স্যালাইন দিয়ে পানিশূন্যতা না কমে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিরার মাধ্যমে (ইন্ট্রাভেনাস) স্যালাইন দিতে হবে। 

খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর নিয়ম:

 

ডায়রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন খাওয়ান: স্যালাইন খাওয়া দেরি হলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

প্রতিবার পাতলা পায়খানা বা বমির পর স্যালাইন খাওয়ান: প্রতিবার পাতলা পায়খানা বা বমি হলে সেই পরিমাণ স্যালাইন খাওয়ান।

বমি হলেও স্যালাইন বন্ধ করবেন না: যদি স্যালাইন খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বমি হয়, তবে অল্প অল্প করে স্যালাইন খাওয়ান।

পাতলা পায়খানা চলাকালীন স্যালাইন বন্ধ করবেন না: যতদিন পাতলা পায়খানা চলবে, ততদিন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তবে দিনের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া চললে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

শিশুদের স্যালাইন খাওয়ান চামচে করে: শিশুদের অল্প অল্প করে চামচে করে স্যালাইন খাওয়ান। শিশুকে শোয়ানো অবস্থায় পানি, দুধ বা স্যালাইন খাওয়াবেন না। শিশুদের কোলে নিয়ে বা মাথা উঁচু করে খাওয়ান।

প্যাকেট স্যালাইন: বাজার থেকে প্যাকেট স্যালাইন কিনে স্যালাইন তৈরি করলে তা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়। প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশনা অনুযায়ী স্যালাইন বানাতে হবে। তবে বাড়িতে তৈরিকৃত স্যালাইন মাত্র ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়।

রোগীর অবস্থা খারাপ হলে চিকিৎসা কেন্দ্রে যান: স্যালাইন খাওয়ানোর পরও যদি রোগীর অবস্থা খারাপ হয়, যেমন পেট ফুলে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, নিস্তেজ হয়ে পড়া, শ্বাসকষ্ট, অথবা হাত-পা খিচুনি হলে, রোগীকে নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান।

ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে রোগীকে খাওয়ানোর জন্য স্যালাইন তৈরি করতে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

 

প্যাকেট স্যালাইন

বাজারে বর্তমানে সহজলভ্য প্যাকেটজাত ওরাল স্যালাইন পাওয়া যায়। একটি প্যাকেটের সমস্ত গুঁড়া  আধা কেজি (৫০০ মিলিলিটার) পরিষ্কার বা ফুটানো ঠাণ্ডা পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। স্যালাইন ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এরপরে প্রয়োজন হলে নতুন করে স্যালাইন তৈরি করতে হবে।

 

লবণ-গুড়ের স্যালাইন

একটি পরিষ্কার পাত্রে আধা কেজি (৫০০ মিলিলিটার) বিশুদ্ধ বা ফুটানো ঠাণ্ডা পানিতে তিন আঙুলের এক চিমটি লবণ দিন (আঙুলগুলো হচ্ছে: বৃদ্ধাঙুল, তর্জনি, মধ্যমা)

এরপর একমুঠ গুড় বা চিনি যোগ করুন।

সবকিছু ভালোভাবে মেশান। স্যালাইন ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এরপর প্রয়োজন হলে আবার তৈরি করতে হবে।

 

চালের গুঁড়ার স্যালাইন

প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্রে চা চামচের চামচ চালের গুঁড়া নিন।

চালের গুঁড়া না থাকলে, একমুঠ চাল (আতপ হলে ভালো হয়) ১০-১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে তারপর পিষে নিন। (যদি শিল-নোড়া ব্যবহার করেন, তা ভালোভাবে ধুয়ে নিন যেন কোনো ঝাল বা মসলা না থাকে)

চালের গুঁড়া আধা কেজি (৫০০ মিলিলিটার) বিশুদ্ধ পানির সাথে মেশান।

অতিরিক্ত আধা কাপ বিশুদ্ধ পানি যোগ করুন, কারণ জ্বালানোর সময় বাষ্প হয়ে কিছু পানি কমে যেতে পারে।

মিশ্রণটিকে চুলায় -১০ মিনিট ধরে অনবরত নাড়তে থাকুন। ফোটানো হয়ে গেলে (বুদবুদ দেখা দিলে) চুলা থেকে নামিয়ে নিন।

মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হলে, তিন আঙুলের এক চিমটি লবণ মেশান।

এই চালের গুঁড়ার স্যালাইন ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। এরপর প্রয়োজন হলে নতুন করে তৈরি করতে হবে।

 

আজকাল ওষুধের দোকানে প্যাকেটজাত চালের স্যালাইনও পাওয়া যায়। এই প্যাকেটজাত স্যালাইন তৈরি করতে প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

 

নোট: যেকোনো ধরনের স্যালাইন বানানোর সময় পরিষ্কার পানি এবং পাত্র ব্যবহার করুন। সঠিকভাবে তৈরি না হলে এটি কার্যকর নাও হতে পারে।

জ্বর পাতলা পায়খানা বমি হলে করণীয়/পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানার ঔষধ

পাতলা পায়খানা হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে শরীর থেকে জল খনিজ লবণ (ইলেকট্রোলাইট) হ্রাস না পায়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় উল্লেখ করা হলো:

 

ওআরএস (ORS) পান করুন:

ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন) পান করা ডায়রিয়া হলে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। এটি শরীরের জল ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।

 

পানির পরিমাণ বাড়ান:

   - শরীর থেকে অনেক জল চলে যায়, তাই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। নারকেলের পানি, স্যুপ বা ফলের রসও পান করতে পারেন।

 

নরম এবং সহজপাচ্য খাবার খান:

    ডায়রিয়ার সময় নরম এবং সহজপাচ্য খাবার যেমন খিচুড়ি, কলা, টোস্ট, আপেলের সস ইত্যাদি খেতে হবে। তেল-চর্বি মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

 

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

যদি পাতলা পায়খানা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ যেমন রক্তমিশ্রিত পায়খানা দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

হাইজিন মেনে চলুন:

   ডায়রিয়ার সময় হাত ধোয়া এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রোগের সংক্রমণ না ছড়ায়।

 

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:

  শরীরকে পুনরুদ্ধার করতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। কাজের চাপ এড়িয়ে চলুন এবং যথেষ্ট ঘুমান।

ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ

ঘন ঘন পাতলা পায়খানার হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন-

  • খাদ্যে ভেজাল
  • ফুড পয়জনিং
  • দুর্বল পাকস্থলি
  • ভেজাল তেল
  • যাদু বা বদ নজর
  • পুরাতন আমাশয় থাকলে
  • ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণ করলে

পাতলা পায়খানা প্রতিরোধের উপায়

পাতলা পায়খানা প্রতিরোধের জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম মানা উচিত:

  • পরিষ্কার পানি পান করুন এবং খোলা খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • খাবারের আগে এবং পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
  • নিরাপদ এবং পরিচ্ছন্নভাবে রান্না করা খাবার গ্রহণ করুন।
  • রাস্তার খাবার অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন।

পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানার ঔষধ




উপসংহার

পাতলা পায়খানা হলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। সঠিক যত্ন, পুষ্টিকর খাদ্য এবং পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে ডায়রিয়া সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবুও, লক্ষণগুলি দীর্ঘস্থায়ী হলে বা জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url